
আজকাল অনেকেই প্রশ্ন করে যে ওষুধ ছাড়া উচ্চরক্তচাপ কমানো যায় কি। এটি একটি কমন প্রশ্ন। হ্যাঁ ওষুধ ছাড়া উচ্চরক্তচাপ কমানো যায় তার জন্যই আজকের এ লেখা। ঔষধ ছাড়া উচ্চরক্তচাপ কমানোর জন্য কিছু প্রাকৃতিক নিয়মকানুন এবং জীবনযাপন ভিত্তিক নিয়মকানুন অনুসরণ করা যেতে পারে। তবে, এটি করতে গেলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। নিচে কিছু কার্যকর উপায় দেওয়া হলো:
১. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসঃ
খাবারের যদি প্রকারভেদ বলি তার জন্য খাবারকে দুটি শ্রেণিতে ভাগ করতে পারি যথাঃ সাস্থ্যকর খাবার এবং অস্থাকর খাবার। সাস্থ্যকর খাবারগুলো হচ্ছে
ক। ড্যাশ ডায়েট (DASH Diet): কম লবণ, উচ্চ পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খান। লবণের পরিমাণ কমান: প্রতিদিন ৫ গ্রাম বা তার কম লবণ খাওয়ার চেষ্টা করুন।
খ। ফল ও শাকসবজি খান: কলা, কমলা, পেঁপে, পালং শাক, ব্রকলি, এবং অন্যান্য শাকসবজি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
গ। প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়ান: প্রসেসড ফুড ও বেশি সোডিয়ামযুক্ত খাবার বর্জন করুন।
২. ওজন নিয়ন্ত্রণ
ওজন বাড়লে রক্তচাপ বেড়ে যায়। সঠিক ওজন বজায় রাখার জন্য নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করুন।
৩. নিয়মিত ব্যায়াম
প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হালকা থেকে মাঝারি ধরনের ব্যায়াম (যেমন হাঁটা, সাইক্লিং, যোগব্যায়াম) করুন। প্রতিদিন না পারলে সপ্তাহে ০৩ দিনে ১৫০ মিনিট হাটা নিশ্চিত করুন।
৪. ধূমপান ও মদ্যপান এড়ানো
ধূমপান এবং অতিরিক্ত মদ্যপান রক্তচাপ বাড়াতে পারে। এগুলো এড়িয়ে চলুন।
৫. মানসিক চাপ কমানো
স্ট্রেস কমানোর জন্য মেডিটেশন, শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম বা ধ্যান করুন। পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন (প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা)।
৬. ক্যাফেইন সীমিত করুন
ক্যাফেইনযুক্ত পানীয়, যেমন কফি, চা বা এনার্জি ড্রিঙ্কস সীমিত পরিমাণে পান করুন।
৭. প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার
ক। রসুন: রসুন রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
খ। গ্রিন টি: অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এই পানীয় রক্তচাপ কমাতে উপকারী।
গ। আমলকি ও মধু: প্রতিদিন সকালে খেলে এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে।
৮. রক্তচাপ পর্যবেক্ষণ করুন
নিয়মিত রক্তচাপ পরিমাপ করুন এবং নিজের অবস্থার উপর নজর রাখুন।
অস্বাস্থ্যকর খাবার বলতে এমন খাবার বোঝায় যেগুলো অতিরিক্ত ক্যালোরি, চর্বি, লবণ, চিনি, বা প্রক্রিয়াজাত উপাদান সমৃদ্ধ এবং শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এই ধরনের খাবার দীর্ঘমেয়াদে নানা ধরনের রোগের কারণ হতে পারে, যেমন স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ইত্যাদি।
যে সকল খাবারে উচ্চ রক্তচাপ/ হাইপারটেশন হয়
যে সকল খাবারে উচ্চ রক্তচাপ/ হাইপারটেশন হয় তার একটি তালিকা নিম্নে প্রদত্ত হলোঃ
১. প্রক্রিয়াজাত খাবার যথা-চিপস, প্যাকেটজাত নাস্তা, প্রক্রিয়াজাত মাংস (সসেজ, সালামি, হট ডগ), ফ্রোজেন ফুড (পিজ্জা, রেডিমেড খাবার) এবং ইনস্ট্যান্ট নুডলস।
২. অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার যথা- প্যাকেটজাত স্যুপ, আচার (অতিরিক্ত লবণ ব্যবহৃত) এবং প্রিজারভড খাবার
৩. উচ্চ চিনি সমৃদ্ধ খাবার যেমন সফট ড্রিঙ্কস (কোল্ড ড্রিঙ্ক, এনার্জি ড্রিঙ্ক), মিষ্টি, চকোলেট, ক্যান্ডি, প্যাকেটজাত জুস (অতিরিক্ত চিনিযুক্ত), ডেজার্ট (কেক, পেস্ট্রি, ডোনাট)
৪. অতিরিক্ত তেল ও চর্বিযুক্ত খাবার যেমন ফাস্ট ফুড, (বার্গার, ফ্রাই, পিৎজা), ভাজা-পোড়া খাবার (সিঙাড়া, পুরি, কাচুরি) এবং মেয়োনেজ, ক্রিম, ডিপস
৫. ট্রান্স ফ্যাট সমৃদ্ধ খাবার যেমন মার্জারিন,ডিপ-ফ্রাই করা খাবার এবং বেকারি পণ্য (পাফ, বিস্কুট)
৬. কৃত্রিম সংযোজনযুক্ত খাবার যেমন কৃত্রিম রঙ ও ফ্লেভারযুক্ত খাবার এবং মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট (MSG)-যুক্ত খাবার এবং প্যাকেটজাত স্ন্যাকস
৭. অ্যালকোহল এবং ক্যাফেইন যুক্ত খাবার যেমন অ্যালকোহলিক পানীয় এবং অতিরিক্ত কফি বা এনার্জি ড্রিঙ্ক

পরামর্শ
ওষুধ ছাড়া উচ্চরক্তচাপ কমানো এর জন্য উপরের খাবারগুলো যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন বা কম পরিমাণে খান।
প্রাকৃতিক, তাজা ও পুষ্টিকর খাবার যেমন ফল, শাকসবজি, সম্পূর্ণ শস্য, এবং কম চর্বিযুক্ত প্রোটিন গ্রহণ করুন।
বাড়িতে রান্না করা খাবার বেশি খান এবং খাবারের গুণগত মান নিশ্চিত করুন।
সতর্কতা:
যদি রক্তচাপ খুব বেশি হয় এবং এই পদ্ধতিগুলো কাজ না করে, তবে দেরি না করে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।